সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: দীর্ঘদিন দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভাবে বরিশাল মহানগরী অনেক পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি আরও বলেছেন, বিগত ১০ বছরে বরিশালে অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে সিটি কপোরেশনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সিটি কপোরেশনে সচিব, সিও, ম্যাজিস্ট্রেট নেই। এখানে দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অভাব ছিল। যে কারণে বরিশাল অগ্রসর হতে পারেনি। তাই বরিশালকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন নতুন সিটি মেয়র। আজ ১৪ নভেম্বর জমকালো আয়োজনে অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের জন্য পঞ্চম পরিষদের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে নগরীর কালুশাহ সড়কের বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, বরিশালবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ৭৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, তা দিয়েই নগরীর জলাবদ্ধতা, সড়ক সংস্কার, বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। বরিশালকে একটি শিল্পবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার মূল লক্ষ্য।
বরিশালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে নবনির্বাচতি মেয়র বলেন, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে নতুন ভবনসহ সচেতন নগরবাসীকে সাথে নিয়ে সকল সমস্যার সামাধান করা হবে। এছাড়াও বরিশালের দুটি বাস টার্মিনালের উন্নয়নে দ্রুত প্রজেক্ট পাঠানোর কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, বরিশালের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের সহযোগিতা এবং দায়িত্বশীল আচারণসহ নগরবাসীর সহযোগিতায় মেয়র আগামীতে একটি নতুন বরিশাল গড়ায় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমি চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। সেখানকার মানুষের কার্যক্রম নিজে দেখেছি। চট্টগ্রামে আমাদের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর। সেখানে বন্দর কেন্দ্রীক অর্থনৈতিক কর্মকা- ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সেখানে এখন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরসহ তিনটি বন্দর তৈরি হয়েছে। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মানুষের জন্যই এগুলো করেছেন, যাতে জনগণ আত্মনির্ভরশীল হয়। কক্সবাজারের পর্যটনকে উন্নত করার জন্য সেখানে রেললাইন হয়েছে, নান্দনিক রেল স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে ঢাকায় মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়েছে। এককথায় সময় মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি বরিশালবাসীও এগিয়ে যাবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিগত দিনে বরিশালবাসীর ভাগোন্নয়নে কেউ কোনো প্রজেক্ট করতে পারেনি। সুতরাং বরিশালবাসী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটের মাধ্যমে পূর্ণরায় নির্বাচিত করার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন বরিশাল করার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন বলে আমি (মেয়র) শতভাগ বিশ্বাস করছি।
শেখ হাসিনার চিন্তা-চেতনায় বরিশালের উন্নয়নের বিষয়টি রয়েছে জানিয়ে মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমরা যদি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণরায় শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে বরিশালের সাথে দেশ আরো অনেক পিছিয়ে যাবে। বরিশালে এনজিওদের কার্যক্রম একেবারে বন্ধ ছিল জানিয়ে মেয়র বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে অতীতের অভিযোগগুলো আমি শুনতে শুনতে অনেকটাই মর্মাহত হয়েছি।
মেয়র বলেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালবাসীর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) এ আন্তরিকতার জন্য বরিশালবাসী কৃতজ্ঞ। মন্ত্রণালয়ে যখন গিয়েছি তখন মন্ত্রী থেকে সচিবসহ সবাই আমাকে স্বাদরে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তাদের বিভিন্ন কথায় আমার নিজের কাছেও খারাপ লেগেছে এবং লজ্জিত মনে হয়েছে, যে বরিশালে আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকা- কিছুতেই মানা যায় না।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে গিয়ে অব্যবস্থাপনা দেখে হতাশ হয়েছেন জানিয়ে মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বরিশালে অনেক সমস্যা, মেডিকেল কলেজের অবস্থা খুবই ভয়ানক। মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতাল থেকে মানুষ সেবা পাবে, তাই এখানে কিছু একটা সুন্দরভাবে করার চিন্তা আমার রয়েছে। এ বিষয়ে দায়িত্বশীল লোকদের সাথে অবশ্যই আলোচনা করবো। প্রতিটি সেক্টরে সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও তেমনি আছে, যা সবাইকে মিলেই করতে হবে। মেয়র বলেন, আমার কোথাও ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই, আমার স্বার্থ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বরিশালের মানুষকে সঠিক সেবা দান করা, সেবার নিশ্চয়তা দান করা এবং সর্বোপরি উন্নয়নের অবকাঠামো তৈরি করা।
বরিশাল নগরীর দুটি বাস টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে মেয়র চরম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এখানকার অব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবা যায়না। স্যানিটেশন, পার্কিং ব্যবস্থা নেই। বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। এখানকার উন্নতি দ্রুততার সাথে করতে চাই। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচনের কারণে কিছু সময়ের জন্য সমস্যা হতে পারে। আমি কারও প্রতি অন্যায় অবিচার করবো না জানিয়ে মেয়র বলেন, কেউ যদি অন্যায়-অনিয়ম করে থাকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশালে কোনো সরকারি অফিসার আসতে চায় না জানিয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, এখানে কর্মকর্তাদের মান-সম্মান থাকেনা। আমাদের প্রতি তাদের এই দৃষ্টিকোণ খুবই খারাপ বিষয়। আমাদের এখানে আঞ্চলিক কোনো কর্মকর্তা নেই, সিও নেই, ম্যাজিস্ট্রেট নেই। সচিব আসার পরে ভয়ভীতির কারণে চলে যেতে চেয়েছেন, আমি তাকে কোনোভাবে অনুরোধ করে রাখার ব্যবস্থা করেছি। মেয়র আরও বলেন, বিগত কয়েক বছরে অনেক প্রকল্প এসেছে কিন্তু সঠিক তত্ত্বাবধায়নের অভাবে সেই প্রকল্পগুলো আবার ফেরত গেছে। যে কারণে জেলা শহর পটুয়াখালীও বিভাগীয় শহর বরিশালের চেয়ে বেশি উন্নয়ন করতে সক্ষম হলেও আমরা তা পারিনি।
মেয়র বলেন, দল-মত নির্বিশেষে আমাকে যেমন সবাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তেমনি উন্নয়ন কাজেও দল-মত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা চাই। আমরা নতুন বরিশাল গড়তে চাই। সেক্ষেত্রে কারও প্রতি আমার হিংসা-বিদ্বেষ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বরিশালের উন্নয়নের স্বার্থে পাঠিয়েছেন। তাই উন্নয়ন কাজে কেউ বাঁধা হয়ে দাড়ালে তা প্রতিহত করা হবে।
সবশেষে মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, আমি অভিযোগ করতে চাই না। আমি চাই পেছনের দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে হারিয়ে যাওয়া প্রাচ্যের ভেনিসের সুনাম ও সুখ্যাতি ফিরিয়ে এনে একটি নতুন বরিশাল গড়তে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার জমকালো আয়োজনে অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করবেন নবনির্বাচিত মেয়র আবদুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।
নগরীজুড়ে সাজসজ্জা ॥ নতুন মেয়রের অভিষেক অনুষ্ঠানকে ঘিরে বরিশাল নগরীকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দেশের বিভিন্ন করপোরেশনের মেয়রসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা। মহানগর যুবলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, বরিশাল নগরবাসী আর বঞ্চিত থাকতে চান না। তারা প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় নবনির্বাচিত সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে উন্নয়নের চমক দেখতে চান। তিনি আরও জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নতুন মেয়রের অভিষেক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন নগরীর কয়েকজন মেয়র, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আলহাজ¦ আমির হোসেন আমু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
আনন্দ মিছিল ॥ দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৯৭ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সোমবার সকালে আনন্দ মিছিল শেষে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। আনন্দ মিছিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরিশালের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।